২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার, ০১:৫৭ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা যখন শুধু পড়ালেখায় ব্যস্ত, তখন আর কে হান্নান ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়ার পণ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করতেন তিনি। ক্রেতাদের চাহিদা বাড়তে থাকায় নিজেই চামড়ার জ্যাকেট তৈরির কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা সেই উদ্যোগ এখন প্রায় অর্ধকোটি টাকার ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে।
র্যাভেনের যাত্রা
আর কে হান্নানের প্রতিষ্ঠান ‘র্যাভেন’। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে র্যাভেনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি তাঁর উদ্যোক্তা জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান। ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি ঝোঁক থাকলেও পরিবার চেয়েছিল তিনি সরকারি চাকরি করুন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার পর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে ২০১০ সালে নিজেই একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করেন হান্নান। হাজারীবাগ থেকে চামড়াপণ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করতেন। তিন বছর পর, ২০১৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করে নিজেই চামড়ার পণ্য তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। বিনিয়োগের অভাবে প্রথমে একজন দক্ষ কারিগর ও সহকারী নিয়ে মাত্র ৩০ হাজার টাকা ধার করে রাজধানীর লালকুঠি এলাকায় একটি ছোট্ট ভাড়া দোকানে শুরু করেন কাজ। এক বছরের মধ্যেই ব্যবসার পরিধি বেড়ে যায় এবং পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
র্যাভেন নামের পেছনের গল্প
গ্রিক মিথলজি ও এডগার অ্যালেন পোর কবিতা ‘র্যাভেন’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন ‘র্যাভেন’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
চ্যালেঞ্জ ও অগ্রযাত্রা
পণ্যের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন জায়গার অভাবে ২০১৬ সালে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে কারখানা স্থানান্তর করেন। সেখানে দক্ষ শ্রমিকের অভাবে স্থানীয় ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালে মিরপুরে প্রথম শোরুম চালু করেন। শুরুতে বিক্রয় ও বিপণন কৌশল নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও স্বচ্ছতা ও মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের কারণে ধীরে ধীরে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলেও ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়ান হান্নান। চট্টগ্রামের খুলশী ও ঢাকার উত্তরা এলাকায় নতুন বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে র্যাভেন চামড়ার জ্যাকেট ছাড়াও অফিস ব্যাগ, জিম ব্যাগ, ওয়ালেট, গ্লাভস প্রভৃতি তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৬৫ লাখ টাকার বেশি। ২০ জন নিয়মিত কর্মী ও বেশ কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি খরচ বাড়ায় ব্যবসায় ব্যয় ৩০-৩৫% বেড়েছে, যা ক্রেতাদের উপরও প্রভাব ফেলছে। তবে আর কে হান্নান বিশ্বাস করেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে চামড়াশিল্পের বাজারও প্রসারিত হবে। এ জন্য অর্থায়ন ও নীতিসহায়তা প্রয়োজন।
আর কে হান্নানের গল্প অনুপ্রেরণা হতে পারে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য—যারা সীমিত পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান। তাঁর একাগ্রতা, পরিশ্রম ও দূরদর্শিতা র্যাভেনকে পরিণত করেছে একটি সফল ব্র্যান্ডে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।